শিরোনামঃ

বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন (কপ-৩০)-এর প্রাক্কালে ঢাকায় নাগরিক সমাজের আহবান।



বৈশ্বিক জলবায়ু আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে জেলেদের মানবাধিকার ও সুরক্ষার বিষয় অগ্রাধিকারে থাকতে হবে।


ঢাকা, ২৮ অক্টোবর ২০২৫। বৈশ্বিক জলবায়ু সংকটে জেলে ও উপকূলীয় জনগোষ্ঠী সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্থ, টেকসই উদ্যোগের অভাবে তারা আজ মৌলিক মানবাধিকার, বিশেষ করে খাদ্য, পুষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুপেয় পানি, আবাসন, ও সাংস্কৃতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, এটা স্বীকার করে নিয়ে জলবায়ু নীতি-পরিকল্পনার আলোচনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সর্বস্তরে ক্ষুদ্র জেলে ও উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর অর্থপূর্ণ অশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, সুরক্ষা ও মানবাধিকার বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে, জীবন, জীবিকা ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে পর্যাপ্ত ও সময়পোযগী ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দরা। 


আজ ২৮ অক্টোবর ২০২৫ ঢাকার তোপখানা সড়কের সিরডাপ মিলনায়তনে কোস্ট ফাউন্ডেশন ও ওয়ার্ল্ড ফোরাম অফ ফিশার পিপলস কর্তৃক  আয়োজিত “রোড টু বেলেম [কপ-৩০]; জলবায়ু সংকট-জেলেদের সংগ্রাম ও নাগরিক সমাজের অভিমত”শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসকল দাবিসমূহ তুলে ধরেন।


কোস্ট ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় উক্ত সেমিনারে বক্তব্য রাখেন সাবেক সচিব ও নির্বাহী পরিচালক নেকম-এর ড. এসএম মঞ্জুরুল হান্নান খান, সাবেক সচিব ও পরিচালক, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আবি আবদুল্লাহ, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জিয়াউল হক, ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশের শরীফ জামিল, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বোর্ড সদস্য আমিনুর রসুল বাবুল, মৎস্য বিভাগের প্রকল্প পরিচালক, সামসুদ্দিন, শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি, কাউসার রহমান, উপকূল সুরক্ষা অন্দোলনের নীখিল চন্দ্র ভদ্র, বিশিষ্ট সাংবাদিক সালাউদ্দিন বাবলু, মো. মোতাহার হোসেন, ভোলার জেলে প্রতিনিধি আশরাফ মাজী ও বাবুল মাঝিসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের এম. এ. হাসান।


মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় এম এ. হাসান, জলবায়ু সংকট ও জেলেদের সংগ্রামের উপর ভিত্তি করে তৈরিকৃত কেইস স্টাডির বিভিন্ন পর্যবেক্ষন ও সূপারিশসমূহ তুলে ধরেন। তিনি বলেন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জেলে ও উপকূলীয় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ক্রমবর্ধমানভাবে পরিবেশগত বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে। টেকসই উদ্যোগের অভাবে তারা মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জলবায়ু নীতি-পরিকল্পনায় ক্ষুদ্র জেলেদের সুরক্ষা ও মানবাধিকার বিষয়গুলো অর্ন্তভুক্তি এবং সর্বস্তরে তাদের অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। 


রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, জলবায়ু সংকটে জেলে ও উপকূলীয় জনগোষ্ঠী সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্থ এটা স্বীকার করে নিতে হবে। বিশ্বব্যাপী জেলে-উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর প্রদত্ত বাস্তবসম্মত, প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব দিতে হবে, কারণ দাবিগুলো শুধুমাত্র বাস্তুতন্ত্র সুরক্ষার বিষয় নয়, বরং মানবাধিকার, খাদ্য সার্বভৌমত্ব এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতের জলবায়ু সংকটের কারনে ঝুঁকিপূর্ণ জেলে ও উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর বেঁচে থাকার বিষয়। তিনি বলেন, এবারের বৈশ্বিক জলবায়ু আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে জেলেদের মানবাধিকার ও সুরক্ষার বিষয়গুলো অগ্রাধিকারে রাখতে নাগরিক সমাজের পাশাপাশি সরকারকেও শক্তিশালী অবস্থান নিতে হবে। 


মঞ্জরুল আহসান খান বলেন, জলবায়ু সম্মেলনের জন্য জাতীয় অবস্থান পত্র তৈরি করার আগে প্রয়োজন ছিলো জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্থ মানুষগুলোর সাথে আলোচনা ও তাদের মতামত নেয়া। তিনি বলেন, জলবায়ু আলোচনা হওয়া উচিৎ স্থানীয় থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত, ক্ষতিগ্রস্থ জনগোষ্ঠীর মতামত না থাকলে সে আলোচনা অর্থহীন। তিনি আরো বলেন আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনায় পরিবশে সুরক্ষার বিষয়টি থাকেনা, এটা নিশ্চিত করতে হবে।


আবি আবদুল্লাহ জলবায়ু সংক্রান্ত স্থানীয় থেকে বৈশ্বিক আলোচনা, নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জেলে সম্প্রদায়ের অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার গুরুত্বের উপর জোর দেন, বিশেষ করে নারীদের।


জিয়াউল হক বলেন, এটা সত্য, ক্ষুদ্র জেলেদের বিষয়গুলো সুনির্দষ্টভাবে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় খুব একটা গুরুত্ব পায়নি, তবে ২০২৭ সালে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা রিভিউ হবে, সেখানে সুরক্ষার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্তির সুযোগ রয়েছে, বৈশ্বিক অভিযোজন লক্ষ্যের যে সূচক, সেগুলো কতটা এই ক্ষতিগ্রস্থ কমিউনিটর স্বার্থে সে বিষয়গুলো আমাদের পর্যবেক্ষনে রাখতে হবে এবং সরকার ও সিভিল সোসাইটিকে একসাথে কথা বলতে হবে। 


মোঃ শামসুদ্দিন বলেন, অপরিকল্পিত অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে উন্মুক্ত জলাশয় সংকুচিত হচ্ছে, যার ফলে দেশীয় মাছের প্রজাতি বিলুপ্ত হচ্ছে।শরীফ জামিল বলেন, আন্ত:সীমন্ত নদী ব্যবস্থাপনার সমাধান না করে সঠিক পানি ব্যবস্থানা সম্ভব নয়, বদ্বীপ পরিকল্পনায় সে বিষয়ে কিছুই উল্ল্যেখ নেই, বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ অতি দ্রুত সংশোধন করতে হবে, নদীর মোহনায় অবস্থিত কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন থেকে সরে আসতে হবে এগুলো নদী জীববৈচিত্রের জন্য মারত্নক হুমকি। জনাব আশরাফ মাজি বলেন, হিমাগার, পরিবহন এবং বাজারে সরাসরি প্রবেশাধিকারের অভাবের কারণে, আমরা জেলেরা স্থানীয় মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে আমাদের মাছ বিক্রি করতে বাধ্য হই, যার ফলে আমরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হই। সরকারের উচিত এই বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া।

এই বিভাগের আরো খবর

অনলাইন ভোট

খবর সরাসরি ইনবক্সে পেতে চান?