শিল্প পুলিশের এসপির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির পরিদর্শন
শিল্প পুলিশ এসপি আনসার উদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় বরবার অভিযোগ করেছেন এক ভুক্তভোগী। এ ঘটনায় প্রথম দফা তদন্ত শেষে দ্বিতীয় দফায় ৫ই জুলাই ২০২৫ ইং তারিখে বরিশালের মুলাদী উপজেলার তার নিজ গ্রাম চরকালেখা ৬ নং ওয়ার্ডে একজন অতিরিক্ত ডিআইজি ঘনটাস্থল পরিদর্শন শেষে ভুক্তভোগীদের জবানবন্দী গ্রহন করেছেন। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে জমি দখল, ধর্ষণ মামলায় ফাঁসানো, স্কুলের ব্রিজ নিজ বাড়ির সামনে স্থাপন করা সহ নানা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। বৈশম্য বিরোধী আন্দোলনে তিনি হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত আসামী। এর আগে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন শিল্প পুলিশের ডিআইজি এডমিন ইসরাইল হাওলাদার। এসপি আনসার উদ্দিন বর্তমানে শিল্প পুলিশ খুলনায় দায়িত্ব পালন করছেন। অবশ্য লিখিত এসব অভিযোগ অস্বিকার করে এসপি আনসার উদ্দিন জানান, যাত্রাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাকে ফাসিয়েছে। ওই থানার ওসি মাইনুলের দুটি বিভাগীয় মামলা তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট দেয়ায় তাকে ফাসানো হয়েছে বলে দাবী তার।
ভুক্তভোগী মূলাদী থানার কায়েতমারা গ্রামের সুলতান ব্যাপারী জানান, তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় বরাবর অভিযোগ করেছেন। তার জমি জোর দখল করে অট্রালিকার রেছেন। এসপি আনসার ২১ দাগের জমি ক্রয় করে ২০ দাগের জমি জোরপূর্বক দখল করেছেন। একট সরকারি স্কুলের সামনের কালভাট জোরপূর্বক তার বাসার সামনে নির্মান করেছেন। অথচ সেখানে আগেও একটি কালভার্ট ছিল। লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, তার মাদক সিন্ডিকেট ও সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে এলাকায়। চাকুরিতে যোগদানের পূর্ তিনি তেমন সম্পদের মালিক ছিলেন না। এখন তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক। চাকুরিতে যোগ দিয়ে ৩/৪ কোটি টাকা ব্যায়ে বাড়িতে ভবন কিনেছেন। শ্বশুর বাড়ি এলাকায় নামে বেনামে সম্পদ করেছেন। ঢাকায় নামে বেনামে প্লট ও ফ্লাট কিনেছেন। মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় তিনি সহ তার পরিবারের ৫ সদস্য চাকরি নিয়েছেন।এস পি আনসার বৈশম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা মামলায় ১৭ নং এজহার ভূক্ত আসামী। যাত্রবাড়ি থানার ওই মামলা নং ২২।(০৭-০৯-২০২৪)। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা ছিল আনসার উদ্দিন। তার পিতা আব্দুল খালেক খান চরকালেখান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন।
আক্তার ব্যাপারি নামেরি আরেক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, ২০১২ সালে লিয়াকত গাজীর মেয়ে রোকেয়া ধর্ষন হয়। ওই ঘটনার মূল আসামী বাবুল মুন্সীকে টাকার বিনিময়ে ছাড়িয়ে দেয়ার ব্যাবস্থা করেন তিনি। এবং পরে তিনি সহ মতিন ব্যাপারী ও আফজাল ব্যাপারীকে গ্রেপ্তার করায় এসপি আনসার উদ্দিন। অথচ তারা ওই ধর্ষিতা মেয়েকে নিয়ে থানায় যায় মামলা করার জন্য। এ ঘটনায় ৩ মাস তারা জেল খেটে মেয়ের জবানবন্দি শেষে নির্দোষ প্রমানিত হলে ছাড়া পায়।
চরকালেখা ইউনিয়ন এর ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার রাসেদ জানান, তার নামে আওয়ামীলীগ সরকার পালানোর এক সপ্তাহ আগে মিথ্যা কলা চুরির অভিযোগ দেয়। পরে তদন্তে মিথ্যা প্রমাণ পাওয়ায় পুলিশ ফারিতে বসে মাফ চায় এসপির আনসারের ছোট ভাই মইন আর ভগ্নিপতি সবুজ খা।
দুলাল বেপারীর ছেলে মাহতার জানান, তাকে পুলিশে চাকরী দেয়ার কথা বলে তার জমির দাম দ্বিগুণ দিবে বলে জমি দলিল নেওয়ার পর জমির ন্যায্য মুল্য পর্যন্ত দেয় নি। তাই সে নিজে হেড কোয়ার্টারে স্বাক্ষী দিয়ে আসছে।
এ দিকে তার পক্ষেও বক্তব্য দিয়েছেন স্থানীয়দের কয়েকজন। তার ভাই মইন উদ্দিন সহ কয়েকজন প্রতিবেশী বলেন, এসপি বাসার পেছনে অন্তত ১৫ টি ঘর রয়েছে। কালভার্টটি হওয়ায় তারা সুফল পাচ্ছেন। তাদের বাড়ির পেছন দিক থেকে একটি বাজার রয়েছে বলেও দাবী করেন তারা। ধর্ষন মামলায় ফাসানোর বিষয়ে তারা জানান, আটককৃতরা এসপিকে দিয়ে ফায়দা নিতে চেয়েছিল। তাকে দিয়ে থানায় কথা বলাতে চেয়েছিল। কিন্তু এসপি কল না দেয়ায় তারা ভাবছে এসপির নির্দেশে তাদের আটক করা হয়েছে। আসল ঘটনা তারা ঘটনার অনেক পরে মামলা দিতে যাওয়ায় ওসি তাদের সন্দেহ করে জেল হাজতে ওই মামলায় আসামী করে পাঠায়। তারা বলেন, জমি জমার সমস্যা থাকলে মাপঝোক করেন। যদি তারা পায় নিয়ে যাবে।
ধর্ষিতা রোকেয়া জানান, যাদেরকে পুলিশ আটক করে তারা তাকে ধর্ষন করে নি। তারা তার সাথে থানায় জায় মামলা করানোর জন্য।
তদন্তকরি কর্মর্তা অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ আব্দুল সালাম জানান, তারা অভিযোগ তদন্তে এসেছেন। এ বিষয়ে এখনি কিছু বলা যাবে না।
এক বাড়ির জন্য একটি কালভার্ট কেন দেয়া হল এ প্রসঙ্গে মুলাদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন জানান, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যাবস্থা নেবেন।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এস পি আনসার উদ্দিন। তিনি জানান, জমির কাগজ দেখেন। ধর্ষনের ঘটনায় ফাসানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অন্যায়ভাবে কেউ কাউকে ফাসাতে পারে না। তার কাছ থেকে সুবিধা নিতে না পেরে এগুলো বলছে অভিযোগকারিরা। প্রতিবেশীকে কলার ছড়া চুরির অভিযোগে ফসানো প্রসঙ্গে বলেন, সেটা তো থানা পুলিশ ওই সময়েই তাকে নির্দোষ মনে করায় ছেড়ে দিয়েছে। তার ভাইয়েরা সবাই শিক্ষিত। তারা কেন মাদক বিক্রী করতে যাবে বলেও পাল্টা প্রশ্ন করেন এসপি আনসার। হত্যা মামলার বিষয়ে জানান, যাত্রাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাকে ফাসিয়েছে। ওই থানার ওসি মাইনুলের দুটি বিভাগীয় মামলা তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট দেয়ায় তার উপরে ক্ষুব্দ ওসি মাইনুল। বিষয়টি আইজিপিকে জনানোর পর তাকে শাস্তিমূলক ওই থানা থেকে সরানো হয়েছে। তিনি আওয়ামীলীগ করেন না দাবী করে জানান তার পিতার দলীয় কোন পদ নেই। কমিটির যেই কাগজ দেখানো হয়েছে সেখানে কোন স্বাক্ষর নেই।
।