শিরোনামঃ

“বইয়ের সংখ্যা নয়, রিভিশনই মুখ্য” — ৪৪তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত মশিউর


ওয়াহিদ-উন-নবী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি


বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) কেবল একটি চাকরির নাম নয়—এটি অসংখ্য তরুণ-তরুণীর জন্য এক অনন্য স্বপ্ন, নিরলস সাধনার প্রতীক। এ পরীক্ষায় সফলতা অর্জন মানে শুধু মেধার নয়, বরং অসীম ধৈর্য, মনোবল ও কঠোর পরিশ্রমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। তেমনই একজন স্বপ্নবাজ তরুণ মো. মশিউর আলম, যিনি ৪৪তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে নিজের অধ্যবসায় ও অদম্য ইচ্ছাশক্তির পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর সংগ্রামী পথচলা অনুপ্রেরণা হতে পারে যে কোনও পরীক্ষার্থী ও স্বপ্নসন্ধানীর জন্য।


মো. মশিউর আলম বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। একাডেমিক ফলাফলে ছিলেন সুদৃঢ়—সিজিপিএ ছিল ৩.৮৩। শিক্ষক হওয়ার প্রত্যয় থেকেই তাঁর বিসিএস যাত্রার সূচনা। তবে পথটা সহজ ছিল না। বিভাগে নানা আন্দোলন ও প্রশাসনিক জটিলতায় সৃষ্টি হয় সেশনজট ও শিক্ষাব্যবস্থার স্থবিরতা, ফলে চার বছরের অনার্স শেষ করতে তাঁকে অতিবাহিত করতে হয় ছয়টি বছর।


তিনি বলেন, “যদিও নানাবিধ প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, তবুও আমাদের শিক্ষকরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁদের প্রতি আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।”


চতুর্থ বর্ষ থেকেই বিসিএসের প্রস্তুতিতে আত্মনিয়োগ করেন মশিউর। বিশেষত, কোভিড-১৯ মহামারির সময় অবসর ও সংহত মনঃসংযোগ তাঁর প্রস্তুতিতে গতি এনেছিল। ৪১তম বিসিএস ছিল তাঁর প্রথম প্রয়াস, যেখানে তিনি সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে নন-ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তবে লক্ষ্য ছিল শিক্ষাক্যাডার, যার স্বপ্ন অবশেষে বাস্তবায়িত হয় ৪৪তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্তির মাধ্যমে।


নতুন প্রজন্মের বিসিএসপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে তিনি বলেন,

“প্রথমেই যে বিষয়টি প্রয়োজন, তা হলো ধৈর্য। হতাশা আসবে, সংশয়ের কালো ছায়া গ্রাস করবে; এই সময়টাতে আত্মিক দৃঢ়তা, প্রার্থনা ও আধ্যাত্মিক সংযোগ আপনাকে শক্ত রাখবে ইনশাআল্লাহ। সিজিপিএ কম হলেও ভয় পাওয়ার কিছু নেই—আপনার বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান মজবুত হলে লিখিত ও ভাইভাতে ভালো করা সম্ভব। বিসিএসের সিলেবাসে এমন অনেক বিষয় থাকবে যা আপনার অনুকূলে নাও থাকতে পারে, কিন্তু মানিয়ে নিয়ে ভালোবাসতে শিখলে পথ অনেক সহজ হয়ে যাবে। বইয়ের সংখ্যা বড় কথা নয়—একটি বইকে যতবার সম্ভব পড়া, বিশ্লেষণ করা ও পুনরাবৃত্তি করাই মুখ্য। সময়, অধ্যবসায় ও নিবিষ্ট চেষ্টাই আপনাকে লক্ষ্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেবে। আর সবচেয়ে বড় শক্তি, মা-বাবার দোয়া—যা থাকলে আপনি পৃথিবীও জয় করতে পারেন।”


তিনি আরও বলেন,

“বিসিএস কেবল একটি চাকরি নয়, এটি একটি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। বিকল্প পরিকল্পনা অবশ্যই রাখা যেতে পারে, তবে বিসিএসের প্রস্তুতি যে কোনও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় আপনাকে এগিয়ে রাখবে। এটি যেমন স্বপ্ন, তেমনি একটি প্রতিশ্রুতি—নিজের দক্ষতা, জ্ঞান ও দায়িত্ববোধের মাধ্যমে জাতি ও রাষ্ট্রকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার।"

এই বিভাগের আরো খবর

অনলাইন ভোট

খবর সরাসরি ইনবক্সে পেতে চান?