বরিশালে প্রতারণার অভিযোগে  গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত



আবু তালহা রিমন।

প্রতারণা, জাল-জালিয়াতি ও বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগে নৌ বাহিনীর সাবেক কর্মচারী (স্টোর হাউজ এ্যাসিস্টেন্ট) মামুনুর রশিদ (৫৩) এর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। 

গত বৃহস্পতিবার  বরিশালের সিনিয়র জুডিসিয়াল  ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত (উজিরপুর) এর জেষ্ঠ বিচারক খোকন হোসেন এই আদেশ দেন। ওই আদালতে বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন উজিরপুর থানার বামরাইল গ্রামের বাসিন্দা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। 

প্রতারণার শোক সইতে না পেরে তিনি গত ১৩ মে  মৃত্যু বরন করেন। 

বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট বসির আহম্মেদ সবুজ আজকের পরিবর্তনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

মামলার ঘটনায় জানা যায় উজিরপুর কালিহাতা গ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুল মোতালেবের ছেলে মামুনুর রশিদ গত ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই ২০ লাখ ৯৩ হাজার টাকার বিনিময়ে এক একর পঞ্চান্ন শতাংশ জমি বিক্রি করার কথা বলে ঐ একই থানার জাহাঙ্গীর আলমের সাথে একটি বায়না চুক্তি করে। পরে সাব কবলা দলিল রেজিষ্ট্রি করার সময় আরও ৩ হাজার টাকা দিতে হবে বলে ঐ চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়।

বায়না চুক্তি শেষ হওয়ার ৩ মাসের মধ্যেই একাধিকবার সাব কবলা রেজিষ্ট্রি দলিল সম্পাদন করার কথা বলে মামলার বাদি জাহাঙ্গীর আলম। এতে কর্ণপাত না করে আজ-কাল করে দিচ্ছি বলে কালক্ষেপন করে প্রতারক মামুনুর রশিদ। 

এরপর বাদি জাহাঙ্গীর আলম  গত ২০২৪ সালের ৫ জুলাই ঐ এলাকার লোকজন নিয়ে প্রতারক মামুনুর রশিদের বাড়িতে যায়। এলাকার লোকজনের সামনে মামুনুর রশিদ রেজিষ্ট্রিকৃত একটি সাব কবলা দলিলের ফটোকপি দেখিয়ে  বলে দলিল তো করে দিছি আবার কিসের দলিল । তার দলিল নং ৩২১২/২০১৭। 

এতে বাদি হতভম্ব হয়ে ঐ দলিলের নম¦র দিয়ে উজিরপুর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে র্সাচিং দেয়। সাব রেজিষ্টার অফিস জানায় উক্ত নম্বরের কোন দলিল সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে রেজিষ্ট্রি কিংবা বালাম ভুক্ত হয় নাই। 

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে  জাহাঙ্গীর আলম গত ২০২৪ সালের ২৮ জুলাই বরিশাল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলি আদালতে (উজিরপুর) দন্ড বিধি আইনের ৪০৬/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারায় প্রতারনা, জাল-জালিয়াতি ও বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৩৬৫/২০২৪ । 

আদালতের বেঞ্চ সহকারি অশোক রায় জানান নালিশি মামলাটি দায়েরের পর ঐ সময়ের  বিচারক মাহফুজুর রহমান মামলাটি আমলে নিয়ে উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। 

মামলার বাদি মৃত্যু হওয়ায় মামলার ১ নং সাক্ষি মোঃ মাসুদ হাওলাদারকে মামলার বাদি হিসেবে নিযুক্ত করেন পাশাপাশি মামলাটি বিচার ও নিষ্পত্তির জন্য বরিশাল চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরন করা হয়।  


মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ আলমগীর হেসেন ঘটনার সত্যতা পেয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঐ আদালতে দন্ড বিধি আইনের ৪০৬/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারায় প্রতারনা, জাল-জালিয়াতি ও বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগে একটি অভিযোগপত্র  দায়ের করেন।

অভিযোগ পত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে এসআই মোঃ আলমগীর হেসেন বলেন অভিযোগ পত্রে যা লেখিছি তা তদন্ত পূর্বক সঠিক লেখিছি। জাহাঙ্গীর আলম একজন ভালো মানুষ। তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। 

মামুনুর রশিদ বলেন আমি কোন বায়না দলিল করি নাই। জাহাঙ্গীর আলম আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। 

 

ঐ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা কালাম সিকদার এ প্রতিবেদকে জানান আমি মামুনুর রশিদকে চিনি। ও একজন প্রতারক।  এলাকার একাধিক ব্যাক্তির সাথে প্রতারনা করেছে। এলাকায় ওকে ভূমি দস্যু বলে ডাকা হয়। 

মামুনুর  ২০ লাখ ৯৩ হাজার টাকা নিয়ে জাহাঙ্গীরকে ১ টি বায়না দলিল করে দেন ও দখল বুঝিয়ে দিন। জাহাঙ্গীর মারা যাওয়ার পর গত ২৫ মে জোড় যবর দখল করে ঐ জমিতে কলা গাছ লাগায় মামুনুর। 

স্থানীয় বাসিন্দা মাহাবুবব বলেন কালিহাতা গুচ্ছ গ্রামের ৪৩ পরিবারের চলাচলের রাস্তা দখল করে নিয়েছে মামুনুর রশিদ। 

খোজ নিয়ে জানা যায় ঐ এলাকার বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেনের কাছ থেকে ২৫ শতাংশ জমি বিক্রির কথা বলে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে জমির দখল ও দলিল করে দেননি মামুনুর রশিদ।

এই বিভাগের আরো খবর

অনলাইন ভোট

খবর সরাসরি ইনবক্সে পেতে চান?