বরিশালে মান্থা  সম্প্রদায়ের নারীদের জীবন অন্ধকারাচ্ছন্ন।


গৌরব কর্মকার,বরিশাল

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের নদী ও উপকূলীয় অঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করে আসছে মান্থা সম্প্রদায়ের নারীরা। শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবে মান্থ সম্প্রদায়ে নারীদের জীবন যেন অন্ধকারে ঢাকা। বরিশাল জেলার বুখাইনগর, লাহার হাট, চরবাড়িয়া,তালতলি, সায়েস্তাবাদ ও চরমনাই ইউনিয়নে এই সম্প্রদায়ের নারীদের দেখা মেলে। 


বছরের পর বছর ধরে তারা সমাজের মূলধারা থেকে বহু দূরে। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও তারা বঞ্চনার অন্ধকারে নিমজ্জিত। সমাজে আর পাঁচ জন নারীর মত বড় হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও অর্থ ও শিক্ষার  অভাবে তাদের স্বপ্ন যেন আকাশ ছোয়ার সমান। তাই  এই সম্প্রদায়ের নারীরা নদীনির্ভর জীবিকায় যুক্ত। তাদের জীবনযাত্রা জড়িয়ে আছে মাছ ধরা ও মাছ বিক্রির পেশায়। কেউ কেউ গৃহস্থের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতে চাইলেও অনেকসময় তাদের “মান্থা” পরিচয়ের কারণে কাজে নিতে অস্বীকৃতি জানায়।

 
তারা অধিকাংশই ভূমিহীন, নিন্মবিত্ত, এবং প্রান্তিক। একটু জমি না থাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতে হয় ভাসমান নৌকায়।
এই সমপ্রদায়ের বাল্য বিবাহের হার একটু বেশিই দেখা যায়। অর্থ ও সচেতনতার অভাবে সঠিক শিক্ষা না থাকায় তারা তাদের সন্তানদের অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেয়। বাল্যবিয়ে, কুসংস্কার এই সমপ্রদায়ের নারীদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলছে।


বরিশালের নদীবেষ্টিত অঞ্চলগুলো প্রায়শই জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় ও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভাসমান ঘরগুলো তুচ্ছ বাতাসেও ভেঙে পড়ে, নারীরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। আশ্রয়কেন্দ্র বা সাহায্য বিতরণেও তারা বঞ্চনার শিকার হন।





২৫ বছর বয়সী মান্থা সমপ্রদায়ের নারী ঝরনা বিবি বলেন, মোগো ঘর বাড়ি কিছু নাই। দুই পোলা মাইয়া স্বামী লইয়া কোন রহমে নৌকায় থাহি। মোগো যদি একটা ঘর দিত তাইলে পোলা মাইয়া লইয়া থাকতে পারতাম। মোরা নৌকায় থাহি নৌকায় রান্দি, নৌকায় খাই। মোগ একটু ভালো খাওয়ার পানি নাই। খাওয়া পানি আনতে অনের দূরে যাইতে হয়। মোগ যদি একটা কল দিত তাইলে মোরা একটু ভালো পানি খাইতে পারতাম। আমাগো কোন সক নাই, সারাদিন শুধু ভয়তে থাহি কহন বিপদ হয়। মোগ কেউ একটু দ্যাহে না।


স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবে নানা রোগ ভুগছেন তারা। বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানির অভাবে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। স্বাস্থ্য সচেতনতার অর্থের অভাবে চিকিৎসা নিতে না পড়ায় দীর্ঘদিন নানা রোগে ভোগে তারা। 



মান্থা নারীরা শুধু সহ্য করে না, তারা প্রতিদিন সংগ্রাম করে টিকে থাকে। এই অবহেলিত নারীদের পাশে দাঁড়াতে হলে উপকূলীয় অঞ্চলে নারীশিক্ষা প্রকল্প, স্বাস্থ্যসেবা, সচেতনতা ক্যাম্পেইন, নারীবান্ধব কর্মসংস্থান ,আবাসন ও জলবায়ু অভিযোজন প্রকল্পে মান্থা নারীদের অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন থাকলেও নেওয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা।

এই বিভাগের আরো খবর

অনলাইন ভোট

খবর সরাসরি ইনবক্সে পেতে চান?