গোপালগঞ্জে মধুমতি নদীর ১২’শ মিটার তীব্র ভাঙ্গন এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ হওয়ায় আশার আলো দেখছেন অনেক পরিবার


স্টাফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে মধুমতি নদীর ভাঙ্গনের ঘর-বাড়ী ফসলি জমি হারিয়ে স্বর্বশান্ত হয়েছে অনেক পরিবার। স্থানান্তরিত হয়েছে হয়েছে অনেক পরিবারকে। তবে এবার ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২’শ মিটার তীব্র ভাঙ্গন এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ হওয়ায় আশার আলো দেখছেন অনেক পরিবার। তবে আরো ৩’শ মিটার এলাকায় প্রতিরক্ষা কাজ করার দাবী স্থানীয়দের। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেছে, বরাদ্ধ পেলে বাকী অংশেও কাজ করা হবে। নদী ভাঙ্গন এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করায় সর্বনাশা মধুমতির হাত থেকে রেহাই পাওয়ার আশার আলো দেখছেন, নদী পাড়ের বাসিন্দারা।


বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সরেজমিনে গিয়ে জানাগেছে, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মানিকদাহ এলাকায় মধুমতি নদীর ভাঙ্গনের এই চিত্র বহু পুরনো। কয়েক বছর আগেও ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারন করলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেত বাড়িঘর, ফসলী জমি, মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা, স্কুল, খেলার মাঠ ও পাকা রাস্তা। স্বর্বশান্ত হয়ে খোলা আকাশের নীচে বসবাস করতে হতো অনেক পরিবারকে।


ফলে ওই এলাকায় নদী ভাঙ্গনরোধে ভাঙ্গনকবলিত এলাকার ১২’শ মিটার এলাকায় প্রতিরক্ষা কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। নদীতে তীব্র স্রোত থাকলেও জিও ব্যাগ ও ব্লক ফেলে ভাঙ্গন ঠেকিয়ে নদীর তীর ব্লক দিয়ে বাঁধাই করে প্রতিরক্ষা কাজ শুরু করা হয়। এ প্রতিরক্ষা কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। ফলে ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে বাড়িঘর, ফসলী জমি, মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা, স্কুল, খেলার মাঠ ও পাকা রাস্তা এবং একটি আশ্রায়ন প্রকল্পসহ বহু স্থাপনা। ফলে এখন নিশ্চিন্তে রাত কাটাতে পাড়ছে নদীপাড়ের বাসিন্দারা। তবে পুরোপুরি নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে আরো ৩’শ মিটার এলাকায় প্রতিরক্ষা কাজের দাবী স্থানীয়দের।


গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সুত্রে জানাযায়, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সরজমিনে পরিদর্শন ও অনুমোদন সাপেক্ষে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে মানিকদাহ ভাঙ্গন এলাকায় ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি প্যাকেজে ৬’শ মিটার করে ১২’শ মিটার প্রতিরক্ষা কাজ শুরু হয়। প্রথমে জিও ব্যাগ ও ব্লক ফেলে ভাঙ্গন ঠেকানো হয়। এরপর ব্লক দিয়ে বাধাই করে প্রতিরক্ষা কাজ করা হয়। কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে, মোট কাজের ৯০ ভাগ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রতিরক্ষা কাজ শেষ হবে। 


মানিকদাহ গ্রামের ইনসান মোল্লা জানান, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে মানিকদাহে মধুমতি নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় প্রতিরক্ষা কাজ শুরু হয়। এতে আমরা অনেক খুশি। এখন আর আমাদের নদীগর্ভে বাড়ী ঘর, ফসলি জমি হারিয়ে নিস্ব: হতে হবে না। তবে পুরোপুরি নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে আরো প্রায় ৩’শ মিটার এলাকায় প্রতিরক্ষা কাজ করার দরকার।


চর মানিকদাহ গ্রামের রহমত খান বলেন, আমাদের এই এলাকায় প্রতিবছরই মধুমতি নদীতে ভাঙ্গন দেখা দেয়। বেশ কয়েক বছরের ভাঙ্গনে আমাদের বাড়িঘর, ফসলী জমি, মসজিদ, মন্দির মাদ্রাসা, স্কুল, খেলার মাঠ ও যোগাযোগের পাকা রাস্তা নদীতে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে আমাদের এই এলাকায় নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করেছে। আমরা এখন থেকে এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবো। বিকেলে আমরা পরিবার নিয়ে এখানে ঘুরতে আসি। এখন স্থানীয়দের কাছে অনেকটা দর্শনীয় স্থান ও বিনোদনের কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। এই এলাকায় আরো ৩০০ মিটার প্রতিরক্ষা কাজ করে ভাঙ্গন ঠেকানোর প্রয়োজন। আমাদের দাবী সরকার যেনো এই ৩০০ মিটার নদী তীরও প্রতিরক্ষা কাজ করে আমাদের রক্ষা করে।


গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড উপ-সহকারী প্রকৌশলী কাজী হায়াৎ মাসুদ জানান, প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করায় এখন আর বাড়ী ঘর, ফসলি জমি আর স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হবে না। এতে এ এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। ইতিমধ্যে প্রতিরক্ষা বাঁধের ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।


গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রেফাত জামিল বলেছেন, মধূমতি নদীর মানিকদাহ এলাকার ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় এই প্রতিরক্ষা কাজ করা না গেলে নদী ভাঙ্গনে কিছু দিন পরে ওই গ্রামের হাজারো পরিবার এবং মানিকদাহ আশ্রায়ন কেন্দ্রের মানুষ চরম বিপদের সম্মূখীন হতো। আমাদের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে, আগামী ডিসেম্বরে ঠিকাদার আমাদেরকে কাজ হস্তান্তর করবে।


তিনি আরো বলেন, মানিকদাহ এলাকায় আরো ৩০০ মিটার প্রতিরক্ষা কাজ কারার জরুরী প্রয়োজন। আমরা আমাদের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা ও অনুমোদন সাপেক্ষে তা বাস্তবায়ন করবো। #

এই বিভাগের আরো খবর

অনলাইন ভোট

খবর সরাসরি ইনবক্সে পেতে চান?