শিরোনামঃ

আধুনিকতার ছোয়ায় এখানো কোটালীপাড়ায় টিকে আছে বাঙ্গালীর ঐতিহ্যের নৌকাবাইচ


স্টাফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ : নৌকা বাইচ বাঙ্গালী সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা ঐতিহ্যবাহী খেলা এবং লোকায়ত সংস্কৃতির আত্মার অংশ হিসেবে পরিচিত। এটি হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্য এবং বাংলাদেশের নদীমাতৃক জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আধুনিকতার ছোয়ায় অনেক কিছু পাল্টে গেলেও এখনো গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বাঙ্গালীর ঐতিহ্যের নৌকাবাইচ টিকে আছে স্বগৌরবে।



সরেজমিনে গিয়ে জানাগেছে, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সনাতন ধর্মালম্বীদের বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষে আড়াই’শ বছরেরও পুরানো নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কালিগঞ্জ বাজার থেকে খেজুরবাড়ি পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহি বাঘীয়ার বিলে এ নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়।


এরই অংশ হিসাবে আড়াই বছরেরও পুরানো ঐতিহ্যবাহী এ নৌকাবাইচে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও বরিশাল জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের ১৫টি সরেঙ্গা, ছিপ, কোষা, বাছারী, জয়নাগরি, টালী ও ছান্দী নৌকা অংশ নেয়। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকাল থেকে সন্ধ্যা পযর্ন্ত কালিগঞ্জ বাজারপ্রান্ত থেকে বুরুয়া বড় ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এ নৌকাবাইচ চলে। প্রকৃতির নিয়মেই পশ্চিম দিগন্তে সূর্যের আলো নেমে পড়ে, আসে অন্ধকার। এ সময় ঠিকারী ও কাশির বাদ্যের তালে তালে জারি সারি গান গেয়ে এবং বৈঠার ছলাৎ-ছলাৎ শব্দে এক অনবদ্য পরিবেশ সৃষ্টি হয়, চলে যায় যে যার আপন ঠিকানায়।


নৌকাবাইচ দেখতে দুপুরে থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থীরা এসে খালের দু'পাড়ে ভিড় জমায়। নৌকায় ও ট্রলারে করে নৌকা বাইচ দেখতে শিশু, নারী ও পুরুষদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। খালের দু’পাড়ে দাঁড়িয়ে এ নৌকা বাইচ উপভোগ করেন।


আর এ নৌকাবাইচকে কেন্দ্র করে খালের দুইপাশে বসে মেলা। মনোহরি, চানাচুর, খেলনা, নাগোরদোলা, ছবির দোকান, কাশাপিতলসহ হরেক রকমের দোকান নিয়ে বসে ব্যবসায়ীরা। সবমিলিয়ে যেন বাঙ্গালীর একাটা মিলন মেলা।


এ নৌকাবাইচে কোটালীপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম মহিউদ্দিন, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বসার হাওলাদার, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছলেমান শেখ, উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব আবদুস মান্নান শেখ ও উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক রঞ্জন মল্লিকসহ বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।


বুরুয়া থেকে নৌকা বাইচ দেখতে আসা নিরুপন দত্ত বলেন, আমাদের এলাকায় নৌকাবাইচ প্রায় আড়াইশ বছরের বেশি দিন ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবছর খুব লেকজন হয়েছে, নৌকাও বেশি হয়েছে। দুপুরের পর থেকেই নৌকার কুইজ প্রতিযোগীতা শুরু হয়। নৌকা বাইচ দেখে অনেক আনন্দ উপভোগ করেছি।


ভাঙ্গারহাট থেকে নৌকাবাইচ দেখতে আসা জয় বাড়ৈ বলেন, আমারা পবিবারসহ নৌকা বাইচ দেখতে আসেছি। খুব মজা হয়েছে। সারা বিকেলটা অনেক আনন্দে কাটেছে আমাদের।


দর্শনার্থী টুস্পা বিশ্বাস বলেন, স্বামী, ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে নৌকাবাইচ দেখতে এসেছি। প্রতিবছর এখানকার নৌকাবাইচ দেখতে আসি। নৌকাবাইচে এলাকাজুড়ে উৎসবের আমেজ তৈরী হয়। নৌকাবাইচ দেখে খুব ভালো লাগলো। 


আয়োজক ও কোটালীপাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বসার হাওলাদার বলেন, কোটালীপাড়া উপজেলার কালিগঞ্জে নৌকাবাইচ এখনো বর্ণিল। এ অঞ্চলে বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষে নৌকাবাইচের মধ্যে দিয়ে মৌসুমের বাইচের সূচনা হয়। এ নৌকাবাইচের কেউ আয়োজন করেন না। মনের খোরাক মেটাতে স্থানীয়রা নৌকাবাইচ দিয়ে থাকেন। এ কারণে এখনো কোটালীপাড়ায় নৌকা বাইচ স্বগৌরবে টিকে আছে। প্রতিবছর কালিগঞ্জ-বুরুয়া খালে শ্রী শ্রী বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষে একদিন ও শ্রী শ্রী লক্ষী পূজায় উপলক্ষে তিন দিন নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়। এ নৗকাবাইচে কোন পুরস্কারের আয়োজন না থাকলেও এলাকার মানুষ এ বাইচে অংশ নেন। #

এই বিভাগের আরো খবর

অনলাইন ভোট

খবর সরাসরি ইনবক্সে পেতে চান?