শিরোনামঃ

সাগর পথে স্বপ্ন বুনে নিঃস্ব হওয়ার পথে গৌরনদীর ৬০ যুবক



গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি:

লিবিয়া থেকে অবৈধ ভাবে সাগর পথে ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন বুনে সাগরের মধ্যে আটক হয়ে বাংলাদেশী ১০৮ যুবকের ঠাই হয়েছে লিবিয়ার একটি গুদামে। গুদামে আটককৃতদের মধ্যে কমপক্ষে ৭০ জন যুবক গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।


তারা সকলেই গৌরনদী উপজেলার পশ্চিম ডুমুরিয়া গ্রামের জামাল মোল্লার ছেলে ইতালি প্রবাসী দালাল জাকির মোল্লা এবং বগুড়ার বাসিন্দা ইতালী প্রবাসী সাজু’র মাধ্যমে গৌরনদীর ৬০ জন এবং কুষ্টিয়ার দালাল লিটনের মাধ্যমে ১০ জন যুবক ও অপর ৪ দালালের মাধ্যমে অন্যান্য জেলার ৩৮ জন ১৫ লাখ থেকে ১৮ লাখ টাকা ব্যয় করে দিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালির পথে পা বাড়িয়েছিলেন। তবে স্বপ্নের দেশ ইতালিতে না পৌঁছাতে পারলেও এখন তারা নিঃস্ব হওয়ার পথে। ঠিক কবে দেশে ফিরতে পারবেন তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। 


সোমবার (২০ অক্টোবর) রাতে আটককৃত যুবকদের একাধিক অভিভাবকরা জানিয়েছেন, লিবিয়ার বাংকিনা কারাগারের পাশে একটি গুদামে আটক বার্থী এলাকার যুবক লাদেন প্যাদা, আকাশ সহ ৩ যুবক সেখানের কেয়ার টেকারের মাধ্যমে ইম্যুতে তাদের মা-বাবার কাছে চিরকুট পাঠিয়ে জানায়, সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালির দিকে যাওয়া তিনটি স্পিডবোডের গৌরনদীর ৭০ যুবক সহ ১০৮ জন বাংলাদেশী বাংকিনা কারাগারের কাছে একটি গুদামে আটক রয়েছেন। পরবর্তীতে বিষয়টি তারা (যুবকদের অভিভাবকরা) দালাল জাকির মোল্লা সহ অন্য দালালদের জানিয়েছেন।

এরইমধ্যে বিষয়টি জানতে পেরে গৌরনদীর খাঞ্জাপুর গ্রামের মেহেদী নামের এক যুবক সহ ৩ যুবকের স্বজনরা কয়েক লাখ টাকা অন্য দালালদের দিয়ে গত শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) রাতে লিবিয়ার ওই গুদামের বন্দিদশা থেকে তাদের ছাড়িয়ে আনেন। এ খবর আটককৃত অন্যান্য যুবকদের স্বজনদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে ভূক্তভোগী পরিবারের কয়েকজন অভিভাবক গৌরনদীর দালাল জাকির মোল্লার বাড়িতে অবস্থান নিয়ে জাকিরের মা ও বোনকে গৃহবন্দি করে রাখে। এসময় কয়েকজন অভিভাবক জাকিরে ঘরের দরজার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করেন। পরবর্তীতে চাপে পড়ে গৌরনদীর ২০ যুবককে শনিবার (১৮ অক্টোবর) মুক্ত করে লিবিয়ার একটি নিরাপদ স্থানে রাখেন জাকির।


ইতালি প্রবাসী দালাল জাকির মোল্লার মা মোসাঃ নুরজাহান বলেন, আমার ছেলে জাকির তার মনোনিত ২ লিবিয়ানকে দিয়ে শনিবার রাতে গৌরনদীর ২০ যুবককে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। আগামী তিনদিনের মধ্যে আটককৃত সকল যুবককে বন্দিদশা থেকে ছাড়িয়ে এনে নিরাপদ স্থানে রাখবেন। তিনি আরও বলেন, জাকির কাউকে জোর করে সাগর পথে কাউকে যেতে বাধ্য করেনি। যারা গিয়েছেন। তারা ঝূকিপূর্ন জেনেই গিয়েছেন।


আটককৃতদের পরিবারের একাধিক সদস্যরা বলেন, ভাগ্য বদলের আশায় ঋণ, ধারদেনা ও জমি বিক্রি করে গৌরনদী উপজেলার পশ্চিম ডুমুরিয়া গ্রামের জামাল মোল্লার ছেলে ইতালি প্রবাসী জাকির মোল্লা এবং বগুড়ার ইতালী প্রবাসী সাজু’র মাধ্যমে গৌরনদীর ৬০ যুবক এবং কুষ্টিয়ার লিটনের মাধ্যমে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার আরো ১০ যুবক ও অপর ৪ দালালের মাধ্যমে অন্যান্য জেলার ৩৮ যুবক ১৫ লাখ থেকে ১৮ লাখ টাকা দিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালির পথে পা বাড়িয়েছিলেন। 


আটককৃতদের বরাদ দিয়ে স্বজনরা বলেন, দালাল জাকির তার মনোনিত লিবিয়ান ২/৩ ব্যক্তির সহযোগীতায় গত ৮ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১২টার দিকে লিবিয়ার বেনগাজি থেকে একটি স্পিডবোড যোগে গৌরনদীর ৩৮ যুবককে সাগর পথে ইতালির উদ্দেশ্যে পাঠায়। 


একই দিন রাত ১টার দিকে একইস্থান বেনগাজি থেকে দালাল জাকির ও সাজু’র গৌরনদীর আরো ২২ যুবক এবং অন্যান্য দালালের ১০ জন সহ ৩২ বাংলাদেশীকে ইতালির দিকে পাঠানো হয়। তবে ঘটনা চক্রে তারা সকলেই সাগর পথে কোষ্টগার্ডের হাতে আটক হয়। এরপর তাদের খোঁজ না পাওয়ায় পরিবারের মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছিলো।


আটককৃতদের বরাদ দিয়ে স্বজনরা আরও বলেন, ভূমধ্যসাগরে তিনটি স্পীডবোড আটক হয়েছিলো। যাতে ১০৮ বাংলাদেশী ছিলো। এরমধ্যে ৬০ জন গৌরনদী উপজেলার ও ১০ জন আগৈলঝাড়ার এবং বাকি ৩৮ জন ঢাকা, মাদারীপুর, সিরাজগঞ্জ, শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।

এই বিভাগের আরো খবর

অনলাইন ভোট

খবর সরাসরি ইনবক্সে পেতে চান?